আমার পড়ার টেবিলে একটি চিঠি দেখতে পাই। তাতে লেখা ‘তুমি কুঁজো হয়ে হাঁটো কেন।’ চিঠিতে কোনো নাম নেই। কে লিখেছে বুঝতে পারলাম না। তবে এটুকু বুঝতে পারলাম যে আমার পরিচিত কেউ লিখেছে। রাস্তায় হাঁটছি আর লক্ষ করছি, আমি কুঁজো হচ্ছি কি না। লক্ষ করলাম, সত্যি সত্যি আমি একটু কুঁজো হয়ে হয়ে যাচ্ছি। আমি সোজা হয়ে হাঁটার চেষ্টা করলাম। তবুও একটু কুঁজো কুঁজো ভাব থেকে যায়।
পরের দিন টেবিলে আরেকটা চিঠি। ‘এভাবে প্র্যাকটিস করতে থাকো, কুঁজোভাব চলে যাবে।’ তার মানে, যে চিঠি দিচ্ছে সে আমাকে অনেক ফলো করে। আমার আগ্রহ এবার বেড়ে গেল।
প্রতিদিনই আমার কাছে এভাবে উড়ো চিঠি আসত। অনেকগুলো চিঠিতে কিছুই লেখা থাকত না।
আমি ছিলাম ক্লাসের সেকেন্ড বয়। টানা চার বছর সেকেন্ড হয়েছি। যখন নাইন থেকে টেনে উঠব, তখন একটি চিঠিতে লেখা, এবার তোমাকে প্রথম হতেই হবে। সেভাবে পড়ালেখা করো। আমার উৎসাহ বেড়ে গেল। নতুন উদ্যমে পড়ালেখা শুরু করলাম। এক বছরের কঠোর সাধনা। বাস্তব হলেও সত্য, আমি প্রথম হতে পারিনি সে বছরও। আবার একটা চিঠি এল, ‘তুমি যে চেষ্টা করেছ, সেটাই বা কজনে করতে পারে, জীবনে তুমি অনেক বড় হবে।’ আমার রেজাল্টের দিন অনেক কেঁদেছিলাম। চিঠিটা পাওয়ার পর দুঃখ কিছুটা কমতে লাগল।
স্কুলে গেলে আমার বান্ধবী সেতুর সঙ্গে দেখা হয়। সেতু আমাকে বলে, ‘কিরে, তুই তো এখন কুঁজো হয়ে হাঁটিস না।’ আমার বুঝতে বাকি রইল না যে, চিঠিটা কে পাঠাচ্ছে।
পরের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে একটি গোলাপ এনে সেতুর পড়ার টেবিলে রেখে দিলাম। কাজটা করেছিলাম জানালা দিয়ে।
গ্রীষ্মের বন্ধে সেতু মামার বাড়িতে বেড়াতে গেল। চিঠিও আসে না। আমি গোলাপ দিই না। মামাবাড়ি থেকে সেতু ফিরে আসার পরে জানতে পারি সেতুর বিয়ে ঠিক হয়েছে। সেতু আর আমার দেখা হলো। সেতুর হাতে একটা চিঠি আর আমার হাতে একটা গোলাপ। দুজনেই কাঁদছি। সেতু প্রথমে আমাকে চিঠি দিল। বলল, এটাই হয়তো শেষ চিঠি। আমি গোলাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, এটাই শেষ গোলাপ। আর কোনো কথা হয়নি আমাদের মাঝে। তবে দুজনের চোখের ভাষা বলে দিচ্ছিল, গোলাপ আর চিঠির মধ্যে কোনো সমঝোতা হলো না।
সুত্র- প্রথম আলো
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق