ব্যাপার চিন্তা করুন তো। আপনি যদি নার্সারি থেকে ফুলের রেডিমেড চারা কিনে নিয়ে আসতে পারেন, তবে কি বাসাতেই বীজ থেকে চারা ফলাবার কষ্টটা করতে চাইবেন? চারা ফলাতে গিয়ে বীজ পচে যেতে পারে, চারা দুর্বল বা রোগাক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। এতো ঝুঁকি না নিয়ে তো আপনি চারা কিনে আনতেই পারেন, তাই না? এবার ভাবুন তো, একই কাজ যদি মানবসন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও করা যায় তবে ব্যাপারটা কেমন হবে? চিন্তিত হবার কিছু নেই। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে টেস্ট-টিউব বেবির ধারণা এখন আর অমূলক নয়। বরং অদূর ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার ব্যাপারেই মানুষ দুশ্চিন্তা করবে। তখন কৃত্রিম উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়াটাই হয়ত হয়ে উঠবে ট্রেন্ড। আর তখন মানুষের জীবনযাত্রায় আসবে অনেক বড় একটা পরিবর্তন। বংশগতি অব্যাহত রাখার জন্য নয়, বরং শুধুমাত্র মনোরঞ্জনের জন্যই যৌন মিলনে লিপ্ত হবে মানুষ। কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না? এ কথাটি কেউ মজা করে বলেনি। বলেছেন গুগল ভেঞ্চারস এর এক পার্টনার ওয়েসলি চ্যান। ডাবলিনে এক জনপ্রিয় টেক কনফারেন্সে একত্রিত হন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসিদ্ধ সব ব্যক্তিত্ব। গুগল বিভিন্ন অ্যাপের জন্য অর্থায়ন করে এবং কোন অ্যাপে বিনিয়োগ করলে লাভ হবে, তা জানার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে জেনেটিকসের এক বিশেষজ্ঞের কথা উল্লেখ করেন তিনি। আর তখন তার থেকেই ভবিষ্যতের এই ধারণা ব্যক্ত করেন তিনি। “ভবিষ্যতে মানুষ শুধুমাত্র আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে শারীরিকভাবে মিলিত হবে, বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নয়,” বলেন তিনি। আসুন যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটা চিন্তা করা যাক। বর্তমানে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এবং জিন সিকোয়েন্সিং গবেষণায় যেমন উন্নতি হচ্ছে, তাতে এমনটা অসম্ভব নয় যে হবু পিতামাতা নিজেদের সন্তানের শরীরে কি কি জিন থাকবে সেগুলো আগে থেকেই ঠিক করে নিতে পারবেন। যেমন বাচ্চার চোখ এবং চুলের রঙ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার প্রতিভা (যেমন ভালো গানের গলা) ইত্যাদি। শুধু তাই নয়। বেশ কিছু জেনেটিক রোগ আছে যেগুলো বাচ্চার মধ্য থেকে নির্মূল করে ফেলা সম্ভব হবে। অর্থাৎ, সুস্বাস্থ্য, সৌন্দর্য এবং মেধার অধিকারী সন্তান “তৈরি” করে ফেলা সম্ভব হবে যাদের আয়ু হবে দীর্ঘ। এবার চিন্তা করুন, ভবিষ্যতের এমনই এক পৃথিবীতে আছেন আপনি যেখানে এহেন কৃত্রিম উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়াটা খুবই সম্ভব। সেই পৃথিবীতে কি আপনি নিজে অথবা আপনার স্ত্রীকে প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণ করতে দেবেন? ভেবে দেখুন এতে ঝুঁকি কতটা। সন্তানের কথা তো পরে। আগে ভাবুন যে গর্ভধারণ করবে তার কি ঝুঁকি। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় অনেক নারীরই মৃত্যু হয় এখনো। আর মৃত্যু না হলেও শারীরিকভাবে তো অসুস্থ হয়ে পড়েনই অনেকে। নয় মাস গর্ভধারণের প্রক্রিয়ার মাঝেও রয়েছে অনেক অসুবিধে। এ সবই কাটিয়ে ওঠা যায় যদি সন্তান কৃত্রিম উপায়ে ধারণ করা যায়। আরেকটা দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করুন। আপনি এবং আপনার সঙ্গী উভয়ের শরীরেই রয়েছে প্রচ্ছন্ন এমন কিছু জিন যা আপনি নিজের সন্তানের মাঝে চান না। এগুলো হতে পারে সন্তানের চেহারা এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্য, হতে পারে কোনও বংশগত রোগের জিন। প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণ করলে এই জিন চলে আসতে পারে সন্তানের শরীরে। কৃত্রিম উপায়ে গর্ভধারণে এই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়া যাবে। মোদ্দা কথা হলো এই, যে সন্তানের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সম্পূর্ণ ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে না দিয়ে বিজ্ঞানের সাহায্যে তাকে আরও নিখুঁত করে তুলতে পারে মানুষ। আর সন্তানের এই কৃত্রিম জন্মদানের প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন হবে না শারীরিক মিলন। সুতরাং তখন শুধুমাত্র পরিতৃপ্তি লাভের জন্যেই একে অপরের সাথে মিলিত হবে মানুষ।
|
Home
Unlabelled
রেডিমেড” সন্তান ও যৌন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
ليست هناك تعليقات:
إرسال تعليق