সংবাদ২৪.নেট ডেস্ক: মাস পেরুলেই অ্যাকাউন্টে জমা হয় ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো। যে কাউকে অবাক করে দেয়ার মতোই বেতন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে এত মোটা অঙ্কের বেতন পেয়েও কতটা সুখে আছেন কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা?
এক বুক স্বপ্ন নিয়ে কোরিয়ায় পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশিদের সে স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। স্বপ্ন পূরণের চেয়ে হতাশাই বেশি গ্রাস করছে তাদের। খাবার সমস্য, ভাষা পুরোপুরি বুঝতে না পারাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রবাসীদের।
২০০৮ সালের ২৭ নভেম্বর কোরিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের করা চুক্তি অনুযায়ী কোরিয়ান ভাষা শিখলে শুধুমাত্র বিমান ভাড়া দিয়ে সে দেশে গিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন বাংলাদেশি তরুণরা। এ চুক্তির ফলে স্বল্প খরচে কোরিয়া যাওয়ার যেমন সুযোগ মেলে তেমনি মাস শেষে মোটা অঙ্কের বেতন বেকার যুবকদের ভালোভাবেই আকৃষ্ট করে।
বেকারত্ব ঘোচানো আর পরিবারকে বাড়তি উপার্জনের স্বাদ দিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী অনেক তরুণ পাড়ি জমায় দক্ষিণ কোরিয়ায়। তবে কোরিয়ার মাটিতে পা দিয়ে হতাশাই বেশি গ্রাস করে বাংলাদেশিদের।
কোরিয়ান ভাষা পুরোপুরি বুঝতে না পারা, খাবার সমস্যসহ নানা প্রতিকূলতায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খেতে হয় তরুণ প্রবাসীদের।
প্রচলিত আছে, কোরিয়ানরা সর্বভূক। তাই তাদের রান্না করা খাবার হজম করতে না পেরে কিছুদিন পরেই দেশের বিমান ধরেন অনেকে। মোটা অঙ্কের বেতনের লোভ আর পরিবারের সুখ শান্তির কথা চিন্তা করে যারা থেকে যান তাদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
কোরিয়ায় ইংরেজি ভাষার বহুল প্রচলন নেই। তাই ভাষাগত সমস্যা এখানে প্রকট। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছাড়া ইংরেজি ভাষা জানা লোকের সংখ্যা খুবই কম। তাছাড়া উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলানোর জন্য কোরিয়ানরা কতটুকু সভ্য সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এর ওপর যারা বাংলাদেশ থেকে কোরিয়ান ভাষা শিখে আসেন তা এখানে চলার জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়।
কোরিয়ার বেশিরভাগ কোম্পানির কাজই কঠোর শারিরীক পরিশ্রমের। একটু অসাবধানতার কারণে ঘটতে পারে অনেক বড় দুর্ঘটনা, এমনকি পঙ্গুত্বও। তার ওপর ইচ্ছা করলেই কর্মস্থল পরিবর্তনের সুযোগ নেই। সেটা নির্ভর করে মালিকের মর্জির ওপর।
নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলছিলেন কয়েকজন কোরিয়া প্রবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বললেন, বাংলাদেশে একটা ব্যাংকে চাকরি করতাম। পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে তিন বছর আগে কোরিয়ায় এসেছি। এ কয়েক বছরে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তিন যুগের বেশি সময়।
জামালপুরের মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশে ফায়ার সার্ভিসের সরকারি চাকরি ছেড়ে মোটা অঙ্কের বেতনের লোভে কোরিয়ায় এসে মনে হয় ভুলই করলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা শামীম জানান, দিনরাত পরিশ্রম করে কোরিয়ানদের মন জয় করতে পারলাম না। ওদের আচরণ মেনে নেয়ার মত না।
এতসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে পরিবার পরিজনের মুখে হাসি ফোটাতে গাধার খাটুনি খেটে যাচ্ছেন কোরিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাদের কষ্টার্জিত টাকায় শক্তিশালী হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রবাসীদের আবেদন, কঠিন পরিশ্রম করে আয় করা অর্থ কাজে লাগিয়ে দেশে ভালো কিছু করার সুযোগ করে দেয়া হোক তাদের। দেয়া হোক দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করতে ভূমিকা রাখার সুযোগ।
No comments:
Post a Comment